মো. মোরসালিন ইসলাম
পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতি, মাটি এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিবেশবান্ধব নিরাপদ ও টেকসই কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ইকোলোজিক্যাল ফার্মিং বা পরিবেশবান্ধব নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে উপজেলা কৃষি অফিসার রুমান আক্তার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, এক সময় ‘খাদ্য নিরাপত্তা’ নিয়ে ভাবতে হত। এখন বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ‘নিরাপদ খাদ্যে’র ব্যপ্তি ক্রমশঃ ছোট হয়ে আসছে। এই সংকট মোকাবেলায় প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করে জৈব কৃষি চর্চার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব নিরাপদ ফল-ফসল উৎপাদনে কৃষি উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তিনি কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের কাছে পরামর্শ না নিয়ে কৃষিবীদ এবং কৃষি বিভাগের অফিসারদের পরামর্শ নিবেন। আলোচনায় দিনাজপুর মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ফজলুল করিম বলেন, প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ এই মাটিকে আমরা নানা ভাবে নির্বিচারে কলুষিত করছি! যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। মাটি আমাদের ‘মা’। মায়ের যেমন পুষ্টিগুন না থাকলে সুস্থ্য সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব নয়; মাটিও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ না হলে ভালো ফসল দিতে পারে না। তাই মাটি পরিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃতির সাথে ভালোবাসা তৈরি করে পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতিতে জৈব সার ও বীজ প্রয়োগ করলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে পুষ্টিমান ও স্বাদ বাড়ায় এবং সংরক্ষণক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
উপজেলার দক্ষিণ কৃষ্ণপুর মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র আয়োজিত গ্রাম বিকাশের মাঠ দিবসে পরিবেশ ও কৃষিবান্ধব এ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আব্দুল আউয়াল সরকারের সভাপতিত্বে এবং প্রকল্প কর্মকর্তা মো. ফিরোজ কবির ও মো. সাদ্দাম হোসেনের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন-ক্যাবের সভাপতি, গণমাধ্যমকর্মি মাসউদ রানা ও উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আ. কুদ্দুস। এছাড়াও দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন মাঠ দিবসে পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের সফল্যের কথা তুলে ধরেন। এ সময় প্রকল্প কর্মকর্তা মো. ফিরোজ কবির উপস্থিত কৃষকদের সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে প্রোবায়োটিক বা জীবামৃত ও প গব্য তৈরির পদ্ধতি দেখান। যা দুষিত মাঠকে শোধন করে এবং মাটির উর্বরতা বাড়ায়।
জেলা ক্যাবের প্রচার সম্পাদক ও উপজেলা ক্যাবের সভাপতি মাসউদ রানা বলেন, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, হাইব্রিড বীজ ও ফল বৃদ্ধিকারক হরমোন প্রয়োগে সাময়িক ভাবে ম্যাজিকের মতো ফলন বৃদ্ধি পেলেও তা পরিবেশ, প্রকৃতি ও মাটি এবং জনসাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরে খাদ্যের সাথে প্রচুর পরিমানে বিষ ঢাঁকে যাচ্ছে। এমন কি মায়ের দুধেও রাসায়নিক বিষের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। তাই, সরকারি ও বেসরকারি ভাবে পরিবেশবান্ধব নিরাপদ ফসলের মার্কেটকে সম্প্রসারিত করতে হবে।