মোঃ সিরাজুল হক রাজু স্টাফ রিপোর্ট
র্যাব, পুলিশ ও ডিবির পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি বেকারীর প্যাকেজিং পণ্য জব্দ করে। কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা সহকারী পরিচালক মালেক মিয়া। প্রশাসনের পরিচয় দেয়া ওই সকল ব্যক্তিকে তাদের দাবিকৃত টাকা দিলে জব্দকৃত বেকারীর প্যাকেজিং পণ্য নিয়ে যাওয়া যায়। মালেক মিয়ার ছত্রছায়ায় এ সব কার্যক্রম চলছে, এমন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মোঃ বাচ্চু মিয়া খান ও আমিনুল সরদার।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জননী সাহান আরা বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত বক্তব্যে বাচ্চু মিয়া খান বলেন, আমরা দু’জনেই বেকারীর প্যাকেজিং পণ্য ঢাকা থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নানা স্থানে গণপরিবহনে সরবরাহ করে থাকি। পদ্মা সেতু চালু হবার পর থেকে আমরা এ ব্যবসা শুরু করি। এরপর থেকেই আক্কাস ০১৩১০৪৯৫৫৬৯, রফিক ০১৭১০৭০৩৮০৯, সম্রাট ০১৭১৬৮৬০৯৯৫, আলামিন ০১৩০৯০০৩৩৬৫, কামরুলসহ ০১৭৬০৭৭০৪৯৩ অজ্ঞাত আরো ৩/৪ জন ব্যক্তি র্যাব, পুলিশ ও ডিবির পরিচয় দিয়ে মালামাল জব্দ করে। আবার ঘটনার কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলে আসেন বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা সহকারী পরিচালক মালেক মিয়া। গত ২৮ নভেম্বর সকাল ১১ টায় উপরোক্ত ব্যক্তিরা বরিশাল কাশিপুর সুরভি পেট্রোল পাম্পের সংলগ্ন স্থানে বসে ৩০ বস্তায় বেকারীর প্যাকেজিং পণ্য জব্দ করে। ৩ লাখ টাকার এ সব পণ্যগুলো বরগুনা ও পটুয়াখালী সরবরাহের জন্য যাত্রীবাহী পরিবহনে ছিল। জব্দ করার পরই বেকারীর প্যাকেজিং কেরিংম্যান মো: বাচ্চু মিয়া খান এর মুঠোফোনে কল দেয় ওই রফিক। বলে ৪০ হাজার টাকা দিলে পণ্যগুলো ছেড়ে দেয়া যাবে। আমি (মো: বাচ্চু মিয়া খান) তখন ঢাকা ছিলাম। অথচ ওই ৩০ বস্তা বেকারীর প্যাকেজিং পণ্যের মধ্যে আমির হোসেন নামের এক ব্যক্তির ৬ বস্তা ছিল। রফিককে ০১৩২৪৩৬৬১১৫ এই নম্বরে ১০ হাজার টাকা বিকাশ করার পরই আমির তার ৬ বস্তা থেকে ৫ বস্তা নিতে সক্ষম হয়েছে।
ঘটনার কিছুক্ষণ পরে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা সহকারী পরিচালক মালেক মিয়া ঘটনাস্থলে যায়। তার ছত্রছায়ায় উপরোক্ত ব্যক্তিরা নানা অপরাধ করে যাচ্ছে। তারা জব্দকৃত পণ্যের স্লিপ বা ঘটনার বর্ণনা বা পণ্যের পরিমান উল্লেখ করে কাউকে কোন লিখিত তথ্য দেয় না। এমনকি জেলা সহকারী পরিচালক মালেক মিয়া ঘটনাস্থলে গেলে মিডিয়া বা কেউ ভিডিও রেকর্ড ধারণ হলে রফিক মোটর সাইকেলের হেলমেট পরিধান করে থাকে। যাতে তার ছবি না উঠে। জব্দকৃত এ সব মালামাল কি হয় তা জানি না। তবে সরকারী খাতায় হিসেবে কম দেখানো হয়। এ কথা সত্য। যেমনঃ গত ২৮ তারিখ জব্দ করা ৩০ বস্তার পণ্যের খবর নিলেই এর বাস্তব প্রমাণ মিলবে।
আমরা এই সিন্ডিকেট চক্র থেকে মুক্তি চাই। এই চক্রটি টাকা দিলে মাল ছাড়ে। নয়তো এক এক সময় র্যাব, পুলিশ ও ডিবির পরিচয় দিয়ে মালামাল জব্দ করে। পরে ঘটনাস্থলে সহকারী পরিচালক মালেক মিয়া আসে। এখন পর্যন্ত আমার জানা মতে, মালেক মিয়া স্যার কখনই কারো কাছে টাকা চায়নি। কিন্ত তার ছত্রছায়ায় ওই সকল অপকর্মের মুক্তি চাই।সাংবাদিকদের প্রশ্নে বাচ্চু মিয়া খান ও আমিনুল সরদার বলেন, তারা দু’জনেই কেরিংম্যান। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীদের ধরে না বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর। যারা দিনমজুরের মত বহন করে তাদের ধরে। যেমন আমি টাকা দিতে পারিনি তাই পণ্য জব্দ হয়েছে। জব্দকৃত পণ্যের এক ব্যবসায়ী তার মালামাল নেয়ার অনুকূলে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে, সে নিয়ে গেছে। এভাবেই চলছে।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকের পক্ষ থেকে আমির হোসেনের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ১০ হাজার টাকা রফিককে দিয়ে জব্দকৃত ৫ বস্তা পণ্য নিয়েছেন বলে মুঠোফোনে স্বীকার করেছেন।পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা সহকারী পরিচালক মালেক মিয়া মুঠোফোনে জানান, রফিক নামের কাউকে তিনি চিনেন না। হয়তো সামনা সামনি দেখলে চিনতে পারে।রফিক বলেন, তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা সহকারী পরিচালক মালেক মিয়ার সাথেই আছেন। গত ১ মাস ধরে কাজ করতেছেন তিনি। তার পদমর্যাদা কি তা জানতে চাইলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।সংবাদ সম্মেলনকারী মাদারীপুর কালকিনির খুনেরচর গ্রামের নূরু খানের ছেলে বাচ্চু মিয়া খান এবং পার্শ্ববর্তী আওলিয়ারচর গ্রামের মোঃ হাকিম সরদারের ছেলে আমিনুল সরদার।